ফার্নিচারের ইতিহাস
ফার্নিচারের ইতিহাস: সময়ের ধারায় আসবাবপত্রের বিবর্তন
মানুষের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ফার্নিচার বা আসবাবপত্রের ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো। গুহাবাসী মানুষ থেকে আধুনিক সভ্যতা—প্রতিটি ধাপে মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ফার্নিচারেরও বিবর্তন ঘটেছে।
প্রাচীন সভ্যতায় ফার্নিচার
প্রাচীন মিসর, ব্যাবিলন, গ্রিস ও রোমান সভ্যতায় ফার্নিচারের ব্যবহার ব্যাপকভাবে দেখা যায়। খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০ সালের মিসরীয় সমাধি থেকে পাওয়া কাঠের চেয়ারের নিদর্শন প্রমাণ করে যে, সে সময়কার সমাজে চেয়ার কেবল অভিজাত শ্রেণির জন্যই সংরক্ষিত ছিল। ব্যাবিলনীয় ও আসিরীয় সভ্যতায় খোদাই করা কাঠ ও ধাতব আসবাব ছিল। গ্রিক ও রোমানরা মার্বেল, ব্রোঞ্জ ও দামী কাঠ দিয়ে উন্নতমানের ফার্নিচার তৈরি করত।
মধ্যযুগের ফার্নিচার
মধ্যযুগে ইউরোপে ফার্নিচারের মূল উপাদান ছিল কাঠ। বিশাল আকৃতির কাঠের টেবিল, সিন্দুক ও খোদাই করা কাঠের চেয়ার রাজপ্রাসাদ ও চার্চগুলোতে দেখা যেত। তৎকালীন মুসলিম সভ্যতায়, বিশেষত আন্দালুসিয়া ও উসমানীয় সাম্রাজ্যে, সুসজ্জিত কাঠ ও হাতির দাঁতের আসবাবপত্র ব্যবহারের চল ছিল।
বাংলার ফার্নিচারের ইতিহাস
বাংলার ইতিহাসেও ফার্নিচারের ব্যবহার অনেক পুরনো। মোগল আমলে রাজপ্রাসাদ ও জমিদারদের বাসগৃহে সুন্দর নকশা করা কাঠের পালঙ্ক, সোফা ও তাক দেখা যেত। ১৭-১৮ শতকে ইউরোপীয় উপনিবেশিক শক্তির আগমনের পর বাংলার আসবাবপত্রে নতুন নতুন নকশার সংযোজন ঘটে। ইংরেজ, ডাচ ও ফরাসি প্রভাবিত ডিজাইনের সঙ্গে দেশীয় কাঠের কাজের মিশ্রণে তৈরি আসবাব আজও জনপ্রিয়।
আধুনিক ও সমসাময়িক ফার্নিচার
১৯শ ও ২০শ শতকে ফার্নিচার শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। শিল্পবিপ্লবের ফলে গণউৎপাদন সম্ভব হয়, যার ফলে সাধারণ মানুষের নাগালে উন্নতমানের আসবাব পৌঁছে যায়। বর্তমানে, বাংলায় ফার্নিচার শিল্প বড় পরিসরে গড়ে উঠেছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ল্যামিনেটেড বোর্ড, ধাতু ও প্লাস্টিকের সংমিশ্রণে টেকসই ও দৃষ্টিনন্দন ফার্নিচার তৈরি করছে।
ফার্নিচারের ইতিহাস আমাদের জীবনধারার পরিবর্তন ও উন্নতির সাক্ষ্য বহন করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর নকশা ও উপাদানে পরিবর্তন এলেও, মানুষের প্রয়োজন ও রুচির প্রতিফলন হিসেবে ফার্নিচারের গুরুত্ব চিরকাল অটুট থাকবে।








